ওষুধ খাতে যে পরিবর্তন এনেছেন ডা. জাফরুল্লাহ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সবসময় চেষ্টা করেছেন দেশের ভালোর জন্য কিছু করার। চেষ্টা করেছেন নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার। তিনি পুরোটা সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। নিজের ক্যারিয়ারের চেয়ে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া এই মহান মানুষটি।

এই মহান মানুষটিকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেই সঙ্গে গরিবের ডাক্তার হিসেবে সমাধিক পরিচিত ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টায় ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেই জাফরুল্লাহ।

১৯৮২ সালে চালু হওয়া ‘জাতীয় ওষুধনীতি’ প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই ওষুধনীতি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএ থেকে।

তার ওষুধনীতি বাংলাদেশের ওষুধ খাতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং এ জন্যই আজকের বাংলাদেশে ওষুধ খাতের এত উদ্যোক্তা বলে মনে করেন অনেকে।

১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন পরিবারে ১০ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী থাকার সময়ে কলেজের দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে আলোচনায় এসে পরে কলেজছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

ডাক্তারি পাশের পর যুক্তরাজ্যে যান জাফরুল্লাহ। সেখানে সার্জন হিসেবে সুনাম অর্জন করেন তিনি। এর পর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনে বসবাসরত এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

একাত্তর সালেরে মে মাসে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও যুক্তরাজ্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ভারতে পাঠায়। তিনি তার এফআরসিপিএস ডিগ্রি অর্জন অসমাপ্ত রেখে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।

মুজিব নগর সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেঘালয়ে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন জাফরুল্লাহ ও ডা. এমএ মবিন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল ঢাকার ইস্কাটনে পুনরায় স্থাপিত হয়।

পরে ১৯৭২ সালের এপ্রিলে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

Share this post

PinIt
submit to reddit

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top