টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। কার্যালয়টির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগেও বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় করা হয়। এখন আবার নতুন করে বিদ্যালয়ের বেষ্টনী ঘেঁষে কার্যালয়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হবে। নতুন ঘরটি গোড়াই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।
নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের জমিতে অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বা বিদ্যালয়ের জমি দখল করা যাবে না। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গোড়াই-সখীপুর সড়কসংলগ্ন পশ্চিম পাশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এর পূর্ব পাশে কোনায় এক–দেড় শতাংশ জমিতে চারচালা একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কার্যালয়টির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। দুই পাশের বেড়ার কিছু অংশ ও মেঝে পাকা করার কাজ বাকি আছে। কার্যালয়ের ভেতর জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো। ভেতরে বসে ছিলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান। তিনি জানান, সবাই চাঁদা দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করছে। নতুন করে ঘরটি তৈরি করতে এরই মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। দ্রুতই নির্মাণকাজ শেষ হবে।
সেখানে কাজ করা রাজমিস্ত্রি শাজাহান মিয়া জানান, আগে একটু দক্ষিণ দিকে একটি ঘর আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ঘরটি সরিয়ে উত্তর দিকে আনা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা বেগম জানান, তিনি প্রায় দুই বছর আগে বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। বিদ্যালয়ের জমির কাগজ এখনো বুঝে পাননি। তিনি শুনেছেন, নির্মাণাধীন ঘরটি আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বিস্তারিত স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা বলতে পারবেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি জয়দেব সরকারের মুঠোফোনে সম্প্রতি কল করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। তবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সহসভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য বাবুল খান বলেন, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০। ১৭ শতক জায়গা নিয়ে তাঁর ভাই প্রয়াত আজম খানের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরোধ ছিল। বিরোধপূর্ণ ওই জমির এক কোনায় গোড়াই-সখীপুর সড়কের পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘরটি নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে সবাই একমত হয়ে কাজটি করছেন। ফলে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে কার্যালয়টি রাখা হয়েছে।
বাবুল খান আরও বলেন, আগেও ওই জায়গায় দলের কার্যালয় ছিল। ১৭ শতক জায়গা নিয়ে তিন বছর ধরে মামলা চলে। প্রায় ছয় মাস আগে আজম মারা যান। এরপর মামলাটির কী অবস্থা, তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য মো. আদিল খান জানান, বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে দুটি মামলা ছিল, যার রায় বিদ্যালয়ের পক্ষে হয়েছে। গোড়াই-সখীপুর সড়কের সঙ্গে বিদ্যালয়ের সীমানার কিছু অংশে ১৯৭৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। সে জন্য কার্যালয়টি উত্তর দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে এলাকার সবার সমর্থন রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বলেন, এ কার্যালয় এখানে থাকলে সারাক্ষণ দলীয় নেতা-কর্মীরা আসবেন, হইচই হবে। নানা দিবসে মিছিল, সভা হবে; মাইকের ব্যবহার করা হবে। এতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে তাঁদের।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।