বিদ্যুতের খুচরা দাম ২০ শতাংশ বাড়াতে চায় বিতরণ কোম্পানিগুলো

খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়াতে চায় বিতরণ কোম্পানিগুলো। ইতোমধ্যে তিন বিতরণ কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাব রোববারের মধ্যে জমা দেবে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাব জমা দেওয়া কোম্পানিগুলো হলো- ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

প্রস্তাবনায় কোম্পানিগুলো গড়ে বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

গত সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। এতে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়ানোর কথা রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে। ওই ঘোষণার দুদিনের মধ্যেই খুচরায়ও দাম বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করে দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভাষ্যমতে, পাইকারি পর্যায় দাম বাড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বাড়বে। আবাসিক ছাড়া অন্য সব গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত সংস্থা ডিপিডিসি।

সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বিইআরসিতে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সুনির্দিষ্ট করে আমরা কোনো মূল্যবৃদ্ধির হার উল্লেখ করিনি। তবে আমাদের প্রস্তাবে আবাসিক বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বাকি গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।’

পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে খুচরা পর্যায় বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন সংস্থাটির এমডি প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম। প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ার পর বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী আমাদের খরচ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রস্তাবনায় খুচরা পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী, বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি খুচরা মূল্য ৭ টাকা ৫৬ থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৩ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

বিইআরসিতে রোববার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠাতে পারে নেসকো। বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে সংস্থাটি। নেসকো-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর পর কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে হলে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে কত শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে সে বিষয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে।

নেসকোর হিসাব অনুযায়ী পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুতের দাম যেহেতু প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে, সেক্ষেত্রে সংস্থাটি ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে।

নেসকোর এমডি জাকিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে রোববার বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠানো হবে। বিতরণ ব্যয় হিসাব করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যতটুকু বাড়ানোর প্রয়োজন, সেটুকুই প্রস্তাব করা হবে।’

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডও (আরইবি) রোববার বিইআরসিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে পারে বলে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির পর বিআরইবির ইউনিট প্রতি খরচ বেড়েছে ১ টাকা ৮ পয়সা।

এ খরচ বিবেচনায় নিয়েই বিআরইবির পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও (ডেসকো) আগামী সপ্তাহে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিতে পারে।

Share this post

PinIt
submit to reddit

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top