কাবিননামায় কুমারী শব্দ সংবিধান পরিপন্থি: হাইকোর্ট

কাবিননামায় কুমারী শব্দ সংবিধান পরিপন্থি: হাইকোর্ট

 যুগান্তর প্রতিবেদন

 ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
26Shares
facebook sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
twitter sharing button
linkedin sharing button
কাবিননামায় কুমারী শব্দ সংবিধান পরিপন্থি: হাইকোর্ট

মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিননামার ৫ নম্বর কলামে থাকা ‘কুমারী’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থি এবং তা বাতিল ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়েছে- ‘কাবিননামায় কুমারী শব্দ থাকা নারীর জন্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের (বৈষম্য বিলোপ সনদ) পরিপন্থি’। এ কারণে ছয় মাসের মধ্যে কাবিননামার ফরম থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সম্প্রতি ৩২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন। রায়ে কাবিননামা থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে পৃথক পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উভয় বিচারপতি।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট বিয়ের কাবিননামার ফরমের ৫ নম্বর কলামে কনে কুমারী কিনা, এ শব্দ উঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কুমারী শব্দের স্থলে অবিবাহিত লিখতে বলেন আদালত। ওই সময় এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার লিপি। সম্পূরক আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রিট মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। দুই বছর পর সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয় সম্প্রতি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, নিকাহনামার ২১ ও ২২ নম্বর দফায় বরের বর্তমানে কোনো বিবাহ বলবৎ আছে কিনা, কেবল সে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বর তালাকপ্রাপ্ত বা বিপত্নীক অথবা কুমার কিনা, এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়নি। অন্যদিকে তর্কিত ৫ নম্বর দফায় কন্যা তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা কিনা, পাশাপাশি কন্যা আগে কোথাও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন কিনা, এ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে- যা অপমানজনক, বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংবিধান ও সিডও সনদের পরিপন্থি। এ ধরনের তথ্য চাওয়ার বিধান সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষায় এ ধরনের হস্তক্ষেপ সংবিধানের ৩১ ও ৩২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত নারীর ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার অধিকার ক্ষুন্ন করে। অবিবাহিত শব্দের পরিবর্তে কুমারী শব্দের প্রয়োগ নারীর জন্য অমর্যাদাকর ও অপমানজনক, যা সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদ এবং সিডও সনদের লঙ্ঘন।

হাইকোর্ট মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্দেশনা প্রদান ন্যায়সঙ্গত হবে। সে অনুসারে সংবিধানের ২৮, ৩১ ও ৩২ নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ১৬০১নং ফরমের ৫ নম্বর দফা বেআইনি ঘোষণা করা হলো। বিবাদীদেরকে (আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা) রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নিকাহনামার (কাবিননামা) ৫ নম্বর দফা সংশোধন করে কুমারী শব্দটি বাদ দিতে হবে। সেখানে লিখতে হবে কন্যা অবিবাহিত, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত নারী কিনা। নিকাহনামার ২১ নম্বর দফা সংশোধন করে সেখানে অনুরূপভাবে লিখতে হবে, বর বিবাহিত/অবিবাহিত/তালাকপ্রাপ্ত/বিপত্নীক কিনা।

পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন-২০০৯ এর অধীনে প্রণীত নিকাহনামায় কন্যার ক্ষেত্রে ‘কুমারী’ কিনা, এমন কলাম রাখা হয়েছে। কিন্তু একই ফর্মে পুরুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো কলাম নেই। যা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। মুসলিম বিবাহ একটি চুক্তি ও পারস্পারিক সম্মতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ বিবাহের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সময়ে রেজিস্ট্রির কোনো বিধান ছিল না। জটিলতা এড়ানোর জন্য ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রির বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য বর ও কনের সার্বিক অবস্থা সমন্বিতভাবে হওয়া উচিত। এ কারণে কন্যা কুমারী কিনা, এ শব্দ বাদ দিয়ে বাকি বর্ণনা বলবৎ থাকবে।

এর আগে বিয়ের কাবিননামার ফরমে কনে কুমারী, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত সংক্রান্ত ৫ নম্বর কলাম থাকার বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে কাবিননামার ফরমের (বাংলাদেশ ফরম নম্বর- ৬০০ ও ১৬০১) ৫ নম্বর কলাম কেন বৈষম্যমূলক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় রুল শুনানির শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।

Share this post

PinIt
submit to reddit

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top