টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির বিরোধ শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর সম্মেলনের নির্বাচনী তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার দাবি জানিয়ে বুধবার (২৬ অক্টোবর) আদালতে মামলা হয়েছে।
জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিবাদীদের।মামলার বিবাদীরা হলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজীর আহমেদ ওরফে টিটো, জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক হাসানুজ্জামিল শাহীন এবং জেলা বিএনপির কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার শফিকুল ইসলাম ওরফে রিপন।
মামলার আবেদনে বাদী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারে জেলা কমিটির জেলা কাউন্সিলে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলনকে সামনে রেখে খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। অফিসে সেই তালিকাও টানানো হয়নি। খসড়া ভোটার তালিকার উপর বাছাই বা আপত্তি গ্রহণ করা হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনো ভোটার তালিকা প্রস্তুত না করে গত ২১ অক্টোবর জেলা বিএনপির কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণা করেন। ২২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিক্রয়, ২৩ অক্টোবর মনোনয়নপত্র গ্রহণ এবং ২৪ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। মনোনয়নপত্র বিক্রয়ের সময় ভোটার তালিকা বিতরণের কথা থাকলেও কোনো প্রার্থীকে ভোটার তালিকা দেওয়া হয়নি। সভাপতি প্রার্থী আলী ইমাম তপন ২৩ অক্টোবর ভোটার তালিকার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু আজও তাকে ভোটার তালিকা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আগামী ১ নভেম্বর কাউন্সিলে নির্বাচন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলে তা প্রহসনে পরিণত হবে। বাদী নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার দাবি জানান।
১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা সম্মেলনের সভাপতি পদে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক, আহ্বায়ক কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক হাসানুজ্জামীল শাহীন ও সদস্য আলী ইমাম তপন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান যুগ্মআহ্বায়ক ফরহাদ ইকবাল ও সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক হাসানুজ্জামিল শাহীন আমার টাংগাইল কে জানান, দলের কতিপয় নেতা আগামী ১ নভেম্বরের কাউন্সিলে নিশ্চিত পরাজয় জেনে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালত কারণ দর্শানোর যে নোটিশ দিয়েছেন, তারা তার জবাব দেবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আদালতে কাগজপত্র দাখিলের পর রায় তাদের পক্ষে আসবে।
জেলা বিএনপির কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা বার সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম ওরফে রিপন আমার টাংগাইল কে জানান, মামলার কপি তিনি পেয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালত জবাব দিতে বলেছেন। যিনি মামলার বাদী তিনি নির্বাচনে প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থক কিছু না। আগামী ৩০ অক্টোবর আদালত শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ দিকে জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এবার কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী ছাইদুল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ভোটার তালিকা প্রার্থীদের দেওয়া হচ্ছে না বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়াও সম্মেলনের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে কাউন্সিলরদের স্থান সংকুলান হবে না। একজন সভাপতি প্রার্থী বাড়ির কাছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সঠিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন পুনরায় নির্বাচনের তারিখ, উপ-কমিটির পুর্নগঠন এবং সম্মেলনের স্থান পরিবর্তনের অনুরোধ জানান।গত বছর ৪ নভেম্বর আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক ও মাহমুদুল হক ওরফে সানুকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে দুটি ধারার সৃষ্টি হয়। পরে গত ৩ আগস্ট পুরনো আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। সেখানে আগের কমিটির আহ্বায়ক আহমেদ আযম খানকে পুনরায় আহ্বায়ক করা হয়। কিন্তু আগের কমিটির সদস্য সচিবসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা কমিটি থেকে বাদ পড়েন। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। আহমেদ আযম খান বিরোধীরা সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক এবং সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকেন।