ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপির প্রমাণ নিয়ে দুজন নির্বাচন কমিশনারের চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। বেসরকারি এ সংস্থাটি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে, ‘ইভিএম ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয় এবং কারো কাছে এ মেশিনের সোর্সকোড নেই। তাই কারো পক্ষে ইভিএম দিয়ে কারচুপির প্রমাণ উত্থাপন করা অসম্ভব।’
রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেওয়া এক চিঠিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সই করা ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান ইভিএম দিয়ে যে প্রশ্নাতীতভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে- তা প্রমাণের দায়িত্ব বা ‘বার্ডেন অব গ্রুফ’ কমিশনের, অন্য কারো নয়। আর যেহেতু অন্য কারো কাছে ইভিএম এবং এর সোর্সকোড নেই, তাই তাদের পক্ষে ইভিএম দিয়ে কারচুপির প্রমাণ উত্থাপন করাও অসম্ভব।’
চিঠিতে সুজনের একটি সংবাদ সম্মেলনের কথা তুলে ধরে বলা হয়, ‘বর্তমান ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, তার অধীনস্থ কর্মকর্তা, কারিগরি টিম ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রভাবিত করা সম্ভব। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএমের ওপর আস্থাহীনতাই সর্বাধিক বড় সমস্যা; যা দূর করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব কমিশনের, আমাদের নয়। চিঠিতে কমিশনের সঙ্গে বসার জন্য সময়ও চাওয়া হয়।’
ওই চিঠির সঙ্গে ‘ইভিএম সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের চ্যালেঞ্জ ও সুজন- এর বক্তব্য’ শীর্ষক এক সংযুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনারদের অসংলঘ্ন বক্তব্য এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে সরকারি দলের প্রস্তাব গ্রহণ করে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহকে আরও উস্কে দিয়েছে বলে আমাদের আশঙ্কা।’
এতে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনই একমাত্র শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ। সে পথ রুদ্ধ হলে অশান্তির মধ্য দিয়ে ক্ষমতা বদল হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়, যা কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। ফলে জাতি হিসেবে আমরা এক ভয়াবহ বিপদের দিকে ধাবিত হতে পারি। আর এর জন্য কমিশনের সদস্যদেরকেও ইতিহাস ক্ষমা করবে না।’
সংযুক্তিতে ইভিএমের ১২টি নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ইভিএমে ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল নেই; নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইভিএম ওভাররাইড করার ক্ষমতা; ইন্টিগ্রেটেড ফলাফল তৈরির সুযোগ নেই, ভোট ডিজিটাল ফলাফল তৈরি ম্যানুয়াল; অন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমকে প্রস্তুত করা হয়েছে; ইন্টারনেট না থাকলেও এ মেশিন দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ও নির্বাচন কমিশনের কারিগরি টিম ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে।
সংযুক্তিতে সুজন বলেছে, ‘বর্তমান ইভিএম কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল একটি যন্ত্র। এমনকি সম্প্রতি সাবেক সিইসি নূরুল হুদাও ইভিএমে কিছু ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আর এই ত্রুটিকে কাজে লাগিয়ে কমিশনের এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তা, কারিগরি টিম এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের পক্ষেই এ যন্ত্রটি দিয়ে নির্বাচনে কারসাজি করা সম্ভব।’
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে ইসিকে অনুরোধ জানিয়ে সংযুক্তিতে বলা হয়, ‘ইভিএম সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করেছে কমিশন। যদিও সরকারি দলের মতামত সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেনি।’