প্রয়াত সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে আঘাত পেয়েছিলেন। বিষয়টি তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল বলে কয়েক দশক ধরে তার দোভাষী হিসেবে কাজ করা পাভেল পালাজচেঙ্কো বলেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৭ বছর ধরে প্রয়াত সোভিয়েত নেতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন পালাজচেঙ্কো। তিনি অসংখ্য মার্কিন-সোভিয়েত শীর্ষ সম্মেলনে গর্বাচেভের সঙ্গে ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে গর্বাচেভের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। তিনি এবং অন্যরা ইউক্রেনের ঘটনায় কতটা মানসিক আঘাত পেয়েছেন সেই বিষয় নিয়েই তাদের ফোনে আলাপ হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, এটা শুধু ২৪ ফেব্র্রুয়ারি শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানই নয়, গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্ক তার জন্য ছিল সত্যিকারের বড় ধরনের ধাক্কা। এটা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল।
পালাজচেঙ্কো আরও বলেন, তার সঙ্গে আমাদের কথোপকথনে এই বিষয়টি আমাদের কাছে খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তিনি যা ঘটছে তাতে (ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনে প্রবেশের পরে) একেবারে হতবাক ও বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কেবল রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় জনগণের ঘনিষ্ঠতায় বিশ্বাস করতেন না, তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই দুটি জাতি মিশে আছে।
বুধবার গর্বাচেভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
মিখাইল গর্বাচেভ বিশ্বে নন্দিত ও নিন্দিত দুটোই। এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন গর্বাচেভ। রাশিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে চলা সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিল তার নেতৃত্বেই। ওই পতনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।
তাই সমাজতন্ত্রবাদীদের কাছে নিন্দিত গর্বাচেভ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য নন্দিতও বটে। অনেক রুশ গর্বাচেভকে ঘৃণা করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অনেক রুশ এখনও গর্বাচেভকে ক্ষমা করতে পারেন না।
সোভিয়েত পতনের পর নিজেও ক্ষমতা হারান গর্বাচেভ। এর পর পশ্চিম দেশগুলোতে বক্তৃতা দিয়েই সময় পার করতেন। ১৯৯৯ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন তিনি।
১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মোটে ৫ শতাংশ।
রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক সময় কড়া সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে যখন ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া, তখন তার পক্ষেই ছিলেন তিনি। গত বছর গর্বাচভের ৯০তম জন্মদিনে তাকে আবার প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন পুতিন।