টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রবাসফেরত সাইফুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবক তার স্ত্রী, শাশুড়ি ও শালিকাকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। আজ শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার সোহাগপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর সহায়তায় অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। আহতরা হলেন সাইফুলের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৮), শাশুড়ি নাছিমা বেগম (৩৮) ও শ্যালিকা খাদিজা আক্তার শিমু আক্তার (১৪)।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে সুমাইয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমাইয়ার নানী জয়নব বেগম বাদী হয়ে সাইফুলকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুমাইয়া আক্তার গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আগামী ১৪ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। এছাড়া খাদিজা আক্তার শিমু একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের আমড়াতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ১৪/১৫ বছর আফ্রিকার একটি দেশে চাকরি করতে যান। গত এক বছর আগে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে আসার আগে সাইফুল তার উপার্জিত টাকা বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে সাইফুল গত ১৭ এপ্রিল একই উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া গ্রামের খাইরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সুমাইয়া স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সাইফুলের বাবা তাকে খরচের টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন। এসময় সাইফুল তার স্ত্রীর লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারছিলেন না। সুমাইয়া পরীক্ষার কথা চিন্তা করে তিন মাস আগে বাবার বাড়িতে চলে যান এবং প্রাইভেটে লেখাপড়া শুরু করে।
সুমাইয়ার মা নাছিমা বেগম একজন স্বামী পরিত্যাক্তা। গার্মেন্টে চাকরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করতেন। গত রবিবার সাইফুল শ্বশুরবাড়িতে আসেন। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার রাতে সাইফুল ও সুমাইয়া রাতের খাবার শেষে একঘরে এবং পাশের ঘরে সাইফুলের শাশুড়ি নাছিমা বেগম, শ্যালিকা শিমু ও নানি-শাশুড়ি জয়নব বেগম ঘুমাতে যান। আজ শুক্রবার ভোরে হঠাৎ পাশের ঘর থেকে সুমাইয়ার মামি তানিয়া বেগম ‘বাঁচাও বাঁচাও আমাকে মেরে ফেললো’ চিৎকার শুনতে পেয়ে বাড়ির লোকজনের সহায়তায় দরজা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় সুমাইয়াকে দেখতে পান। পরে উদ্ধার করতে গেলে সাইফুল শাশুড়ি ও শ্যালিকাকেও দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন।
পরে স্থানীয় লোকজন এসে সাইফুলকে আটক করে পুলিশে দেন। আহতদের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সুমাইয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আগামী রবিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আইয়ুব খান আমার টাঙ্গাইলকে অভিযুক্ত সাইফুলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাইফুল ১৪-১৫ বছর আফ্রিকার একটি দেশে চাকরি করে উপার্জিত সমস্ত টাকা বাবার কাছে পাঠিয়েছেন। দেশে এসে বিয়েও করেছেন। বাবা তাকে কোনো হাতখরচ দেন না। তিনি স্ত্রীর খরচ মেটাতে পারছিলেন না। এ নিয়ে তার মন ভালো যাচ্ছিল না বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে কী কারণে স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে কুপিয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি। আহতদের চিকিৎসা চলছে।