টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে উৎপাদিত আনারস এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। মধুপুরের জলডুগী বা জায়ন্টকিউ ও কলম্বিয়া জাতের আনারসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের চাষিরা বেশি লাভের আশায় আনারসে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করায় এক সময় ক্রেতারা এখানকার আনারস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে আবার বিষমুক্ত আনারস চাষ এই আনারসের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবে চারা রোপণের পর ১৮ মাসে আনারস পরিপক্ব হয়। সেখানে রাসায়নিক ব্যবহার করায় সাত-আট মাসেই আনারস বাজারে ওঠানো যায়। কম সময়ে অধিক লাভের আশায় অনেক চাষি আনারসে রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে বিষমুক্ত ফল চাষ করে বাজারে বিক্রি করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। বিষমুক্ত আনারস অনেক সময় শতকরা ১০-২০টি পচে যায়।
ভারতের মেঘালয় থেকে মধুপুরে গড়াঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের মাধ্যমে প্রথম এই আনারস আবাদ শুরু হয়। আনারস ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ফল। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানান্যাস সেটাইভ্যাস। পর্তুগিজ অ্যানান্যাস থেকে আনারস শব্দের উৎপত্তি। অর্থ চমৎকার ফল। ১৯৫০ সালের দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় আনারসের বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আনারসের আবাদ হয়।
সম্প্রতি মধুপুর বনাঞ্চলের আলোকদিয়া, আউশনারা, দিগলবাইদ, অরণখোলা, জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার, রসুলপুর, পঁচিশমাইল, শালিকা, জয়নাতলী, আশ্রা ও ইদিলপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা আনারস কাটতে ব্যস্ত। ভোর থেকেই কৃষকরা ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে জুঙ্গা (খাঁচি) ভর্তি করে আনারস বাজারে এনে বিক্রি করছেন। মধুপুরের আনারস স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনারস কেনার জন্য ক্রেতা বা ব্যাপারিরা ভিড় করেন মধুপুরের বিভিন্ন বাজারে।
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, মধুপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেও বিষমুক্ত আনারস চাষির সংখ্যা বাড়ছে। তারা বিষমুক্ত আনারস আবাদ করছেন। তবে বিষমুক্ত আনারস বেচাকেনায় ব্যাপক প্রচার দরকার। তাহলে কৃষকরা রাসায়নিকমুক্ত আনারস চাষে উৎসাহিত হবেন।এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, মধুপুর অঞ্চলের আনারস ছাড়াও করলা, চিচিঙ্গা, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বিদেশে রফতানি হচ্ছে। গত বছর করোনাভাইরাসের মধ্যেও আমরা পাঁচ মেট্রিক টন সবজি হর্টিক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রফতানি করেছি। চলতি বছর ১০ মেট্রিক টন সবজির পাশাপাশি পাঁচ মেট্রিক টন আনারস রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবজির পাশাপাশি আনারস রফতানি হওয়ায় দিন দিন আনারস চাষিদের মধ্যে বিষমুক্ত আনারস চাষে আগ্রহ বাড়ছে।