করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছরের অধিক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টাঙ্গাইলে দুই শতাধিক কিন্ডার গার্ডেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অন্তত সারে চার হাজার শিক্ষক কর্মহীন হয়েছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছে, করোনায় প্রতিষ্ঠানের আয় বন্ধ থাকলেও ব্যয় অব্যাহত থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুল ঘর বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছে। আবার অনেক শিক্ষক পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা কিন্ডার গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশন সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, জেলার ৮১৯ টি কিন্ডার গার্ডেনের মধ্যে করোনাভাইরাসের কারনে ২০২ টি বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৮৬ টির মধ্যে ১৩ টি, দেলদুয়ারে ৪৯ টির মধ্যে ১৩ টি, মির্জাপুরে ১১০ টির মধ্যে ৩৫ টি, সখীপুরে ১১০ টির মধ্যে ২৯ টি, বাসাইলে ৪৯ টির মধ্যে ১০টি, কালিহাতীতে ৮১ টির মধ্যে ২৮টি, মধুপুরে ৫৯ টির মধ্যে ১২টি, ঘাটাইলে ৯৪টির মধ্যে ২৪ টি, ধনবাড়ীতে ৬০টির মধ্যে ১৩ টি, গোপালপুরে ৩০টির মধ্যে ৪টি, নাগরপুরে ৫৬টির মধ্যে ১৪ টি ও ভ‚ঞাপুরে ৩৫ টির মধ্যে ৭টি কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ হয়েছে। এসব কিন্ডার গার্ডেনের ১১ হাজার ৪৩৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছে।সরেজমিনে বন্ধ হওয়া কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, স্কুলের ভিটিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পিচুরিয়া গ্রামে হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক চাকরী করতেন। দিন যতই যাচ্ছিলো এই প্রতিষ্ঠানের ততই উন্নতি হতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১২০ জন। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যেমন লেখা পড়ার মান বাড়তে থাকে ঠিক তেমনি শিক্ষকরাও এ প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে পরিবার নিয়ে মোটামুটি চলতে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানের মালিক ঋণগ্রস্ত হলেও পরবর্তীতে স্কুলের তিনটি টিনের ঘর বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। শিক্ষকরাও বেকার হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ভিটেতে এখন সবজির চাষ করা হচ্ছে। হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুলের মতো টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়া এলাকার কর্ডোভা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচতলা একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সাত বছর আগে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি। ওই ভবনটি বর্তমানে আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক শুকুর মাহমুদ আমার টাঙ্গাইলকে বলেন, এই স্কুলে চাকরী করেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালই চলতাম। কিন্তু করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকার থেকে বেরসকারি শিক্ষকদের প্রণোদনা দিলে আমাদের অনেক উপকার হতো।হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে আয় রোজগার না থাকায় ঋণগ্রস্ত হয়ে প্রথম দিকে শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়েছে। করোনার প্রকোপ দীর্ঘ হওয়ায় স্কুলের তিনটি টিনের ঘর বিক্রি করে দিয়েছি। শিক্ষকরাও বেকার হয়েছে। স্কুলের জায়গায় এখন সবজির চাষ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই প্রনোদনা পেলেও প্রি-ক্যাডেট এবং বেরসকারি শিক্ষকরা কোন সহযোগিতা পায়নি। ফলে এদের মানববেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
কর্ডোভা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিন আল মাসুদ আমার টাঙ্গাইলকে বলেন, ২০১৪ সালে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। কয়েক বছর ভালভাবে চললেও করোনাভাইরাসে কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায় ১৮ জন শিক্ষক বেকার হয়েছে। অপর দিকে ভাড়া নিতে না পারায় মালিকের চাপে ভবন ছেড়ে দিতে হয়েছে। পরে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীও অন্যত্র চলে গেছে।
জেলা কিন্ডার গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশন সমস্বয় কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট নাসির আহমেদ শাহিন আমার টাঙ্গাইলকে বলেন, করোনাকালে বেরসকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাড়ে চার হাজার উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জেলার সরকারি স্কুলগুলোর চেয়ে কিন্ডার গার্ডেনে পড়াশোনার মান ও ফলাফল ভাল হয়। এজন্য কিন্ডার গার্ডেনকে রক্ষা করতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ আমার টাঙ্গাইলকে বলেন, স্কুল খোলার পরে কতগুলো কিন্ডার গার্ডেন স্কুল বন্ধ এবং চালু আছে সে বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই জেলায় কতগুলো কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ হয়েছে তা জানা যাবে।