যুগে যুগে বাঙালি কবিদের কবিতা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। মানুষ এসব কবিতার বই সংগ্রহ করে ও পাঠ করে আনন্দ পায়।অনেকে আবার কবিতা আবৃত্তি শুনতে চায়। তাইতো কবিতার সেই আবেগ হৃদয়ে ধারণ করে কণ্ঠের উচ্চারণে কবিতাকে প্রাঞ্জল করে তোলেন একজন আবৃত্তি শিল্পী।তার কাব্যকলার নান্দনিক উপস্থাপনায় কবিতার প্রতিটি শব্দ গাঁথা হয় শ্রোতার হৃদয়ে; রূপকে, প্রতীকে, উপমায় ও অলংকারে।তেমনি একজন আবৃত্তি শিল্পী নাহরিন তানিয়া।সম্প্রতি এই আবৃত্তি শিল্পীর বেশ কিছু আবৃত্তি বিশেষ নজর কেড়েছে কবিতা প্রেমীদের। বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কবিতা তার কণ্ঠের ভিন্ন দ্যোতনায় অনুরণন সৃষ্টি করেছে শ্রোতা হৃদয়ে।বিশেষ করে নান্দনিক পরিবেশনাকেই গুরুত্ব দেওয়ায় তার সেসব রচনা হয়ে উঠেছে নতুন এক মাত্রায় উত্তীর্ণ শিল্পকর্ম।
এই প্রসঙ্গে কথা হলে নাহরিন তানিয়া বলেন, কবিতার সঙ্গে যোগ অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে লেখাপড়ার সূত্র ধরে ছাত্র জীবনের প্রথম থেকেই আবৃত্তি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ। তখন থেকেই আবৃত্তিতে আগ্রহ। আছে লেখালেখি করার অভ্যেসও। সেই থেকেই আবৃত্তির শুরু এবং এখন পর্যন্ত পথচলা।
সম্প্রতি প্রখ্যাত আবৃত্তিকার মহিদুল ইসলামের নির্দেশনায় সৈয়দ শামসুল হকের লেখা “আমার পরিচয়”, আবুল হোসেন খোকার লেখা “অনন্ত মিথিলা”, হাসান হাফিজুর রহমানের “অমর একুশে”, সৈয়দ শামসুল হকের “পরানের গহীন ভিতরে”, কবি সৃজা ঘোষের “বছর চারেক পর”, মল্লিকা সেনগুপ্তের “শুভম তোমাকে” ও কবি সুমন চট্টপাধ্যায়ের “তোমাকে চাই”মঞ্চে ও ইউটিউবে এই আবৃত্তি শিল্পীর কণ্ঠে কবিতার আবৃত্তি শ্রোতা মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া টেলিভিশন নাটকেও তার আবৃত্তি ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন নির্মাতাদের সঙ্গে কথা চলছে বলেও জানান এই শিল্পী।আবৃত্তি নিয়ে এই শিল্পী বলেন, প্রতিটি কবিতারই একটা আলাদা অর্থ থাকে। কেবল কবিদের পক্ষেই সম্ভব সেই অর্থকে ধারণ করা এবং প্রকাশ করা। আর কবিতার পংক্তিমালায় ব্যবহৃত শব্দটি কীভাবে এর অর্থকে প্রকাশ করে, তা একজন আবৃত্তিশিল্পীকে আবিষ্কার করতে হয়। সেই অর্থকে কবিতার নান্দনিক উপস্থাপনার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করতে হয়।
পেশায় আইনজীবী হলেও শুধু আবৃত্তি নয়,সম্পৃক্ত মঞ্চের সঙ্গেও। তবে কবিতার প্রতিই তার ভালোবাসা সব থেকে বেশি। বিশেষ করে কবিতা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার। প্রশ্ন ছিল আইনজীবী হয়েও কেন কবিতার প্রতি ভালোবাসা?মৃদু হেসে তিনি বলেন, আইন আমার পেশা তবে কবিতা আমার ভালোবাসা।হাতে গোনা কয়েকজন কবি ছাড়া আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু আমাদের অনেক পুরনো ও প্রসিদ্ধ কবিদের ভুলে যেতে শুরু করেছে। আমরা ছাত্র অবস্থায় যেসব ভালো কবিদের কবিতা পাঠ করেছি, এখন কিন্তু তাদের অনেকে চিনেন না। আমি চাই সেই জায়গাটি ফিরিয়ে আনার। বিশেষ করে আমাদের প্রজন্মের যেন আমাদের বাংলা ভাষার সকল ভালো কবিদের সঙ্গেই পরিচিত হতে পারে, সেই লক্ষ্যেই শুরু করেছি কার্যক্রম। আবৃত্তি, কবিতা আর ঐতিহ্য; এদের নিয়েই বাংলা কবিতার উন্নয়নে এগিয়ে যেতে চাই অনেকটা পথ।প্রশ্ন ছিল কবিতা না আইন কোনটা?
দুটোই, কারণ একটি আরেকটির পরিপূরক।কবিতা মানুষের কথা বলে… বাক স্বাধীনতার কথা বলে, ন্যায়ের কথা বলে…. ভালোবাসার কথা বলে…. প্রতিবাদের কথা বলে।আর আইন মানুষের উপরোক্ত অধিকারগুলো বাস্তবায়নসহ কথা বলবার অধিকার …ন্যায় প্রতিষ্ঠার অধিকার বাস্তবায়ন করে।।