আফগানিস্তানের জাতিগত সংস্কার, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, অবকাঠামোর বিকাশ, শিক্ষার উন্মেষ কিংবা শিল্পের চর্চা করার জন্য মার্কিনীরা ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে ২০ বছর আফগানিস্তানে থাকেননি। তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন ৯/১১ এ কথিত আল- কায়েদার হামলার প্রতিশোধ নিতে, যা গতকালই মিস্টার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বক্তব্যে পরিষ্কার করেছেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন। ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে নৈশকালীন কমান্ডো হামলায় ওসামা বিন লাদেনেকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁরা তাদের মিশন সফল করেছে। এতোদিন যে তারা সেখানে ছিলো, তা ছিলো তাদের হাতের পুতুল সরকারকে নিরাপত্তা দিতে এবং আল- কায়েদার কফিনে শেষ পেরেকটি টুকে দিতে। ট্রাম্প জমানায়ই রাষ্ট্রীয় ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কঞ্জুস বলে পরিচিত ট্রাম্প আফগান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেন এবং মিস্টার বাইডেন এই প্রক্রিয়ায় তুলির শেষ আঁচড়টিই কেবল দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য ব্যর্থতায় আফগানিস্তানের কিছু আসে যায় না। আফগান জনগণের আসে যায় পরিবর্তিত সরকার আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি কতটুকু সদয়, দেশের প্রতি তাঁদের দরদ কতটুকু তার উপর। যদিও তাঁদের ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়ায় একটা অনৈতিকতা ও আদর্শহীনতার বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছেন! তালিবান আদর্শিক যুদ্ধ বা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে কিংবা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। বিতর্কিত ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত মার্কিনীদের দালাল সরকার হিসেবেই আশরাফ গানি ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং পাকিস্তান ও চীনের সহায়তায় তাদের দোসর বা দালাল হিসেবেই তালিবানও ক্ষমতা দখল করেছে। দুটি শক্তিই একই মুদ্রার এপিঠ – ওপিট। দুই দলই আল্লাহর প্রভুত্ব না মেনে বিদেশীদের প্রভু বানিয়েছেন।
সুতরাং অনৈতিক ও আদর্শহীন শক্তি কতদিন টিকে থাকে সেটিই দেখার বিষয়!
আফগানিস্তানের জনগণের দুর্ভাগ্য, তাঁরা গণতন্ত্র মনা ও জাতীয়তাবাদী কোন দল তৈরি করতে পারেননি, যে দল আফগান মানুষের কথা বলবে, তাঁদের মাটির কথা বলবে, তাদের ভাষা- সাহিত্য – শিল্পের কথা বলবে।
এখন, তালিবান যদি সেই ২০ বছর আগের তাঁদের শাসনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অপেক্ষাকৃত উদার, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী, অর্থনৈতিক সংস্কারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, খেলাধুলো, শিল্প- সংস্কৃতি, দর্শন-বিজ্ঞানের বিকাশে আগ্রহী মনোভাবাপন্ন সরকার পরিচালনা করে, তাহলেই তারা বৈশ্বিক স্বীকৃত সহজে আদায় করতে পারবে। তাঁদের দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
এর উল্টো দিকে হাঁটলে হোঁচট তারা তো খাবেই, সাথে ইসলামের সম্মান ও উদারতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।