রাজধানীর তোপখানা রোডের সেই গৃহকর্মীর (১২) বিশেষ অঙ্গে বেলুনি ঢুকিয়ে নির্যাতন করে তার চোখে-মুখে মরিচ লাগিয়ে দিতেন গ্রেফতার আইনজীবী নাহিদ জাহান আঁখি। এছাড়া বেলুনি দিয়ে তার বাম হাতের কনুইয়ে আঘাত করে হাড়ভাঙা জখম করেন।
গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় এসব কথা বলেন ওই গৃহকর্মীর বাবা। সোমবার (৫ জুলাই) শাহবাগ থানায় মামলা করেন তিনি। মামলায় আসামি করা হয় গৃহকর্তা তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আঁখিকে।মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ আগস্ট দিন ধার্য করেন।এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত ১৫ জুলাই তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার বাদী (গৃহকর্মীর বাবা) সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ৯ মাস আগে তার মেয়েকে গৃহপরিচালিকা হিসেবে কাজ করার জন্য মাসে তিন হাজার টাকা ধার্য করে তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আঁখির বাসায় দেন। তাদের থেকে দুই মাসে মোট ছয় হাজার টাকা পান। এরপর থেকে তারা সাত মাসে বাদী বা ভুক্তভোগীকে কোনো টাকা-পয়সা দেননি। এছাড়া মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার সঙ্গে দেখা করা ও মোবাইলে কথা বলতে দেয়া হয় না।গত ৩ জুলাই রাতে শাহবাগ থানার পুলিশ বাদীকে ফোন করে জানায়, গত ১ জুলাই তার মেয়েকে তানভীর আহসান পায়েল ও তার স্ত্রী নাহিদ জাহান আঁখি মেরে গুরুতর জখম করেছেন। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহকর্মী জানায়, ঠিকমতো কাজ না করার অজুহাতে তানভীর ও নাহিদ কারণে-অকারণে তাকে দীর্ঘদিন ধরে অমানবিকভাবে মারতেন। এ ঘটনা নাহিদের বাবা-মা-ভাইবোনকে জানালেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি।গত ১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে আসামিরা বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ঘরে থাকা লাঠি দিয়ে ওই গৃহকর্মীর হাতে, পায়ে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের মাধ্যমে জখম করে। একইদিন রাত ১০টার দিকে তার কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে তার পেছনে শক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে।এছাড়া তানভীর ও নাহিদ রুটি তৈরির বেলুনি দিয়ে গৃহকর্মীর দুই হাঁটু, পা, পিঠে এবং দুই হাতের বিভিন্ন জায়গায় ও বাম চোখের ওপর আঘাত করে। নাহিদ কাঠের বেলুনি দিয়ে বাম হাতের কনুইয়ে হাড়ভাঙা জখম করে এবং বিশেষ অঙ্গে বেলুনি ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। এরপর চোখে-মুখে ও বিশেষ অঙ্গে মরিচ লাগিয়ে দেয়।
ওই গৃহকর্মী জীবন বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে ভাত খেতে না দিয়ে তাকে গোসলখানায় আটকে রাখা হয়। গত ৩ জুলাই সেখান থেকে বের হয়ে ঘরে রাখা বিস্কুট খেলে আসামিরা তাকে মারধর করে। এরপর ভুক্তভোগী জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নেয়।
উল্লেখ্য, শনিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর তোপখানা রোডের ওই বাসার এক প্রতিবেশী মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি দ্রুত সহযোগিতা ও আইনি ব্যবস্থার আর্জি জানান। এরপর তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার (৪ জুলাই) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।