মধুপুর গড়ে বৈচিত্র্যময় ‘আরবোরেটাম’

টাঙ্গাইলের শাল-গজারির ঐতিহ্যখ্যাত লালমাটির মধুপুর গড়ের বনাঞ্চলে প্রায় তিন হেক্টর এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে আরবোরেটাম। এটি উদ্ভিদবিদ্যার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুশীলনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া গাছ পরিচিতি, উদ্ভিদবিদ্যা অনুশীলন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা বা অনুশীলন উদ্যান হিসেবে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ উন্নয়নে প্রকৃতি পর্যটন, বিনোদন ও জীনের আঁধার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই আরবোরেটাম।

বন বিভাগের রসুলপুর জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, মধুপুর গড়ের বনাঞ্চলে প্রায় ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিশাল আয়তনের এ বনে নানা প্রজাতির প্রাণিকুল রয়েছে। নানা কারণে বন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ফলে কোনো কোনো উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

এরপরও পরিদর্শনে আসা উদ্ভিদবিদ্যা গবেষকদের পক্ষে সহজে ও অল্প সময়ে উদ্ভিদকুল সম্পর্কে জানা শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ বনে আসা মানুষদের উদ্ভিদকুল সম্পর্কে অল্প সময়ে-সহজে জানা, বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠী জনগণের সহায়তায় এ আরবোরেটাম গড়ে তোলা হয়েছে।

মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জের জলই এলাকায় তিন হেক্টর ভূমিতে গড়ে তোলা এ আরবোরেটাম উদ্ভিদ গবেষকদের কাছে এরইমধ্যে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এ উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য গামার, গর্জন, গজারি, চাপালিশ, কানাইডাঙ্গা, বহেড়া, ডুমুর, সিধা, ওজা, হরিতকি, আমলকি, গাদিলা, পিত্তরাজ, কাঞ্চন, বন আমড়াসহ বৈচিত্র্যময় হরেক প্রজাতির চার হাজার ৮০০ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে প্রজাতির সংখ্যা বাড়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এক-দেড় বছরেই চারাগুলো সতেজ হয়ে বেড়ে উঠে আরবোরেটাম সাজাতে শুরু করেছে। এ আরবোরেটামে চারদিকে প্রাচীর ও একটি ব্যারাক নির্মাণ করার কাজ চলছে।

জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম হাবিবুল্লাহ জানান, আরবোরেটাম প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- উদ্ভিদ গবেষণা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বিপদাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের আবাসস্থলের সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, জবরদখল ও অবৈধ গাছ কর্তনরোধ করে বন নির্ভর স্থানীয় বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দারিদ্র নিরসন।

তিনি আরও জানান, এ আরবোরেটাম প্রতিষ্ঠার ফলে মধুপুর বনের ঐতিহ্য টিকে থাকবে, বৃদ্ধি পাবে বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য।

টাঙ্গাইল উত্তরের সহকারী বন সংরক্ষক মুহাম্মদ জামাল হোসেন তালুকদার জানান, আরবোরেটাম উদ্ভিদবিদ্যার গবেষণা ও অনুশীলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উদ্ভিদকুলের উপর নির্ভরশীল বন্যপ্রাণীকেও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে। মধুপুরের উদ্ভিদকুলকে রক্ষার স্বার্থে আরবোরেটামের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আরবোরেটাম বনে আসা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাজে বিশেষ সহায়ক হবে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, এ আরবোরেটাম শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণার কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। মধুপুরের বন থেকে যেসব উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা যাবে। এখান থেকে বীজ ও কাটিং সংগ্রহ করা যাবে। এটা হবে দেশের অন্যতম একটি আরবোরেটাম।

Share this post

PinIt
submit to reddit

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top