ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কোটি টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রলীগ নেতা

টাঙ্গাইলে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকিং বুথের এক এজেন্ট। ওই ব্যক্তির নাম সারোয়ার হোসেন সবুজ। তিনি বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার বাবার নাম মারিফত মিয়া। বাড়ি আইসড়া গ্রামে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরতের দাবিতে বাসাইলের ফুলকী ইউনিয়নের আইসড়া বাজারে অবস্থিত আইসড়া ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ ঘেরাও করে মিছিল-সমাবেশ করেছেন।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর আগে ডাচ-বাংলা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসড়া বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ চালু করা হয়। বাসাইলের ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাজারে একটি দালান ভাড়া নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করেন। আইসড়া গ্রাম তাঁতসমৃদ্ধ এবং অনেক মানুষ প্রবাসী হওয়ায় তাদের স্ত্রী এবং বাবা-মার টার্গেট করেন সবুজ। ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে সাধারণ মুনাফার চেয়ে উচ্চহারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে প্রলুব্ধ করেন। অতি মুনাফার আশায় গ্রামের সহজ সরল অনেক মানুষ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তাদের জমানো টাকা ব্যাংক হিসাবে নেই।

এজেন্ট সবুজের কাছে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন গ্রাহককে টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে টালবাহানা করেন এবং সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের জমানো টাকা পাওয়ার আশায় বাজারে সালিশ-বৈঠক বসান। সেখানে সবুজ টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। হঠাৎ করে সাত দিন ধরে সবুজ ব্যাংক বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল-সমাবেশ করেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগে জানা গেছে, গ্রাহক রুম্পা বেগমের ১৪ লাখ টাকা, আফজাল হোসেনের ৯ লাখ, রাজু বেগমের ৭ লাখ, জলি বেগমের পৌনে ৪ লাখ, বাজারের চা বিক্রেতা আবুল হোসেনের ১ লাখ, ইতি খানের ৪০ হাজার টাকাসহ অসংখ্য গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন এজেন্ট সবুজ।

প্রতারণার শিকার গ্রাহক ও দোকান ব্যবসায়ী রাজু বলেন, আমিও পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছি। ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক টাঙ্গাইল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এর পেছনে জড়িত। তা নাহলে সবুজ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস পেতেন না। আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও টাকা ফেরতের দাবি জানান তিনি।

গ্রাহক ইতি খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রেখেছি। তিনি এমন প্রতারণা করবেন বুঝতে পারিনি। প্রথম যখন টাকা জমা রাখি তখন মোবাইলে এসএমএস আসত। পরে ব্যাংকে টাকা জমা দিলে এসএমএস আসত না। এ বিষয়ে তাদের জানালে তারা বলতেন সার্ভার নষ্ট হয়েছে।’

গ্রাহক আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিদেশ থেকে পাঠানো ৯ লাখ টাকা আমার মা ও স্ত্রী জমা রাখেন। উচ্চ হারের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের টাকা জমা রাখতে বাধ্য করেন। তারাও গ্রামের ছেলে হিসেবে বিশ্বাস করেছেন। দেশে এসে টাকা উঠাতে গেলে জানতে পারি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। তিনি এমন প্রতারক ভাবতেও পারিনি।’

ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল জানান, গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিন দিন আগে আইসড়া বাজারের সব গ্রাহক, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বাজার কমিটির নেতা এবং পলাতক এজেন্ট সবুজের বাবাকে নিয়ে সালিশ-বৈঠকে হয়। সবুজের বাবা তার সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে রাজি হয়েছেন।’

বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কামরান খান বিপুল বলেন, ‘সবুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। সে একটি ব্যাংকের এজেন্ট ছিল। বহু গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রমাণ পেলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

টাঙ্গাইল ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মিটিং করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে অনেক চেষ্টা করেও অভিযুক্ত সারোয়ার হোসেন সবুজের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Share this post

PinIt
submit to reddit

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top