ইতিহাসের দৃষ্টি প্রসারিত আছে অনেক পিছনে। আমাদের বঙ্গীয় ‘ব’দ্বীপে কবে মানব বসতি শুরু হয়েছে, কবেই বা এই নিম্নাঞ্চলে সমুদ্র গর্ভ হতে মাথাউঁচু করেছে আমরা কি তার সঠিক যুক্তিনির্ভর ইতিহাস উদ্ধারে সামর্থ হয়েছি? না হইনি। কারণ এসব বিষয়ে রয়েছে নানামত, নানাপথ। মূলতঃ বঙ্গীয় ‘ব’দ্বীপ তথা সমগ্র ভারত বর্ষের ইতিহাস অনেকটা অসংলগ্ন।

গ্রীস, রোম ও ইংল্যান্ডের ইতিহাসের মতো সুসংগঠিত ভাবে সংরক্ষিত নয়। তবুও বিভিন্ন গবেষণা পরষ্পরায় আবিস্কৃত নিত্য নতুন তথ্যে ইতিহাস একটু হলেও ভিন্ন আলোয় প্রতিভাত হয়। ইতিহাস পাঠে জানা যায় আজ থেকে পাঁচ, সাড়ে পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চলই সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিলো।

শুধু মাত্র মধুপুর ভাওয়াল বনাঞ্চল শৈল শিলার উচ্চতা নিয়ে বিরাজ করেছিলো। ধারণা করা হয় যে, সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের গারো পাহাড় হতে ভাওয়াল গড় পর্যন্ত যে পাহাড়মালা তাই হচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম স্থলভাগ। এই স্থলভাগের বড় অংশ টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত। কাজেই এ জেলার জনবসতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সু-প্রাচীন।

প্রাচীনকালে(৬২৯-৬৪৫খ্রিস্টাব্দ) পরিব্রাজক হিউ-এন্থ-সঙ্গ ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করেন।হিউ-এন্থ সঙ্গ এর ভ্রমণ কাহিনী পাঠে জানা যায় বঙ্গভূমি ছয়টি প্রধান রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। ১। পৌন্ড্র, (উত্তর বঙ্গ, ব্রক্ষপুত্রের পশ্চিম ভাগ) ২।কামরূপ (ময়মনসিংহের পূর্বভাগসহ পূর্ববঙ্গ ও আসাম) ৩। সমতট (ঢাকা-ফরিদপুর) ৪। কমলাহু (ত্রিপুরা বা কুমিল্লা) ৫। তাম্রলিপ্ত (দক্ষিণ পশ্চিম ভাগ) ও ৬।কর্ণ সুবর্ণ (পশ্চিমবঙ্গ) উপরের বর্ণনায় প্রতীয়মান আমাদের টাঙ্গাইল জেলা তৎকালে কামরূপ রাজ্যের বা প্রাগ জ্যোতিষপুর রাজ্যাংশ- যাকে বলা হয় ‘ভাটির মুল্লুক’এর অন্তর্গত ছিলো।

মহাভারত কাব্যগ্রন্থের কামরূপ রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত বলা হয়েছে। হিন্দু শাসন আমলে খ্রি. দশম শতাব্দীতে বাঙ্গালা সেনও পাল রাজ বংশের আবির্ভাব হয়। এই উভয় বংশের নৃপতিবর্গ বঙ্গভূমির বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করতো। ক্রমে কামরূপ রাজ্যেও তাঁদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায় টাঙ্গাইল অঞ্চল খ্রি. দশম হতে একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত ১২০ বছর কাল পাল রাজেন্যবর্গ এই অঞ্চল শাসন করেছে। এই সময়ে ময়মনসিংহর দক্ষিণ অংশ বর্তমান কাপাসিয়া, রায়পুরা ও ধামরাই নামক স্থানত্রয়ে শিশুপাল, হরিশ্চন্দ্র পাল ও যশোপাল নামক পাল বংশীয় তিনজন ক্ষুদ্র নৃপতির রাজ্য ও পশ্চিমাংশে মধুপুরে পাল রাজ ভগদত্তের ক্ষুদ্র রাজ্য অল্পে অল্পে বধিষ্ণু ছিলো।

আজ পর্যন্তও ভাওয়ালের অরণ্য মধ্যে শিশুপালের বিশাল দিঘি ও বিরাট রাজধানীর ভগ্ন কঙ্কাল বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে।মধুপুর ভগদত্তের গৃহভগ্নাবশেষে, পুষ্করিণী- ‘বারতীর্থ দিঘি, দেবলায়, মদন গোপালের বাড়ি প্রভৃতির চিহ্ন এখনও বিদ্যমান আছে। ভগদত্তের প্রতিষ্ঠিত ‘বারতীর্থ’ক্ষেত্র এখনও প্রতিবৎসর বৈশাখ মাসে ‘মেলা’হয়ে থাকে। প্রবাদ এই যে, রাজা ভগদত্ত স্বীয় পুণ্যশীলা জননীর আজ্ঞামতে বারতীর্থের পূণ্যোদক আনিয়া নিজ রাজধানীকে ‘বারতীর্থাশ্রম’করে ছিলেন। সেই ‘বারতীর্থাশ্রমের’পুণ্যনাম আজও তিরোহিত হয়নি। এর পর দ্বাদশ শতাব্দীতে সেন বংশের নৃপতি সেনের আমলে টাঙ্গাইল জেলা সেনদের অধিকারে আসে। সেন রাজবংশের অভ্যূদয়ে এই ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো লয় প্রাপ্ত হয়ে যায়। এয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে সোনার গাঁ পতনের সময় পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ সেন রাজ্য বংশের শাসনাধীন ছিলো।

সেন সাম্রাজ্যের উপর মরণাঘাত হানেন তুর্কী আক্রমণকারী ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী।তিনি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষণ সেনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী নদীয়া (বা নদীয়া) আক্রমণ করেন। বৃদ্ধ রাজা রাজধানী থেকে পালিয়ে এসে পূর্ববাংলার বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারপর তাঁর রাজত্বকাল দু’বৎসর স্থায়ী হয় এবং তাঁর রাজ্য সীমাও খুব সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ দু’বৎসর রাজত্বকালে বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার উপর তিনি তাঁর প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন কিনা তা’নিশ্চিত করে বলা কঠিন। অন্যদিকে মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী তাঁর বিজয়-অভিযান পূর্বদিকে প্রসারিত না করায় এ জেলার উপর মুসলমানদের নদীয়া বিজয়ের কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ পর্যায়েও মুসলমানদের প্রভাব বা অধিকার এ জেলার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ রকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ জেলার এক শতাব্দীর ইতিহাস আমাদের কাছে খুবই অস্পষ্ট। কামরূপের বার ভূঁইয়াদের প্রভাব তখন এ এলাকায় বিদ্যমান ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন।

তবে এ জেলা তখন কামরূপের কোন বার ভূঁইয়ার শাসনাধীন ছিল তা আমাদের জানা নাই। প্রথম যে মুসলিম নরপতি যিনি এ জেলার উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি হলেন গোড়াধিপতি সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ্(দেহলভী)। তিনি ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেন, সম্ভবত শামসুদ্দিন ফিরোজের (দেহলভী) রাজত্ব কালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে বর্তমান কালের ময়মনসিংহ জেলার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা যা পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার অংশ বিশেষ ছিল সেখানে মুসলমান রাজত্বের সূচনা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমদিকে। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ বাংলার পূর্বাঞ্চল সোনার গাঁয়ে স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। এ সময়ে বাংলা তৎকালীন রাজধানী গৌড়ের অধিপতি ছিলেন।

১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ শামছুউদ্দিন ইলিয়াস শাহ, আলাউদ্দিন আলী শাহকে হত্যা করে দুই বাংলা একত্রিত করে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেন, যা প্রায় দুই শত বৎসরকাল অর্থাৎ ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ শেরশাহ গৌড় দখলের পূর্বাপর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। এরপর বাংলা মুগল শাসনের অন্তভূক্ত হওয়ার পূর্বপর্যন্ত প্রায় ৩৮ বৎসরকাল রাজধানী গৌড়কে কেন্দ্র করে নানা যুদ্ধ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ ছিলো। ফলে বাংলার উত্তরাঞ্চলের এ অরাজকতাময় পরিবেশ থেকে বিশাল যমুনানদী পার হয়ে অনেক লোক চলে আসে পূর্বাঞ্চলে। পূর্ব বাংলায় তখন বার ভূঁইয়াদের রাজত্ব। অপর দিকে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ মুগল সেনাপতি মুনিম খান, দাউদ খানকে পরাজিত করে গৌড়ের তথা বাংলার শাসনভার গ্রহণ করলে বাংলার বার ভূঁইয়াদের স্বাধীন জমিদাররা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন।

ঈশা খাঁ এ সকল বা ভূঁইয়াদের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন এবং সোনারগাঁয়ে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। কিংবদন্তী মতে, ঈশা খাঁ বাইশ পরগণার মালিক ছিলেন। ঈশা খাঁয়ের রাজ্যের প্রকৃত আয়তন বা চৌহদ্দির সঠিক বিবরণ প্রকৃতভাবে পাওয়া না গেলেও বাইশ পরগণার মালিকানা সম্পর্কে যে কিংবদন্তী প্রচলিত আছে সেটা সঠিক বলে মনে হয়। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সূত্র হতে ঈশা খাঁয়ের পরগণাগুলোর নাম পাওয়া যায়: কেদারনাথ মজুমদার রচিত ময়মনসিংহের ইতিহাস; জেলা গেজেটীয়ার, ময়মনসিংহ এবং পূর্ববঙ্গ গীতিকার ‘দেওয়ান ঈছা খাঁর’পালাগানে।এসব ঘটনাবলীর সমন্বয়ে কিছু গরমিল লক্ষণীয়। এ তালিকায় আটিয়াকে একটি পরগণা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আবুল ফজলের বিবরণ থেকে জানা যায়, পুখুরিয়া, কাগমারী, আটিয়া এবং বড়বাজু পরগণার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল এ সময়ের টাঙ্গাইল।বর্তমানে টাঙ্গাইল থানাধীন আটিয়া একটি ইউনিয়ন ও গ্রাম। ১৯৬১ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের গ্রাম পরিসংখ্যানে স্থানটি কসবা আটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আটিয়া পরগণার শাসক বাবা আদম শাহ্ কাশ্মিরী মৃত্যুর পূর্বে প্রিয়ভক্ত সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসনভার অর্পণ করেন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে সুবেদার ইসলাম খাঁর সুপারিশে দিল্লীর মোগল বাদশা জাহাঙ্গীর ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত করেন।

তবে বেঙ্গল ডিস্ট্রিক গেজেটিয়ারে বলা আছে সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) কাছ থেকে ও করটিয়ার পন্নী পরিবারের উর্ধ্বতন পুরুষ সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের আমলে একটি জায়গার জায়গীর প্রাপ্ত হন। অন্য মতে সাঈদ খান শাহজাহান বাদশাহ(১৬২৭-১৬৫৮খ্রিস্টাব্দ) থেকে আটিয়ার শাসক নিযুক্ত হন। তবে সময় কাল যাই হোকনা কেনো সাঈদ খান পন্নীই করটিয়া জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনা প্রবাহে ও পারিপাশির্বকতায় সাঈদ খান ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দ আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত হয়ে ছিলেন এ কথা অধিক যুক্তি গ্রাহ্য। জায়গীরের প্রাণকেন্দ্র ছিল আটিয়া। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ টোডরমলের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় বঙ্গদেশ ১৯ সরকার ও ৬৮২ মহাল বা পরগণাতে বিভক্ত করা হয়।

এর মধ্যে বাজুহার অধিকাংশ এলাকা নিয়ে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয়েছে এবং এর অবশিষ্ট অংশ ঢাকা ফরিদপুর ও পাবনা জেলার অন্তর্গত। সরকার বাজুহার সীমানা পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় আটিয়া পরগণা অধিকাংশ সময় সরকার বাজুহার অন্তর্ভূক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ্য, টোডরমলের শাসন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের সময়ই আটিয়া ও কাগমারী দু’টিকে পরগণায় পওন করা হয়।১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ মুগল সম্রাট আকবরের মৃত্যু হলে ক্ষমতায় আসেন জাহাঙ্গীর।তিনি ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান। ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খান তার রাজধানীকে রাজমহল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঐতিহাসিক আবদুল করিমের মতে, ইসলাম খান মুসা খানের বিরুদ্ধে সমরাভিযান শুরু করে ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দ ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র পূর্বাঞ্চল মুগল শাসনাধীনে আনতে সচেষ্ট হন।অপরপক্ষে টাঙ্গাইল অঞ্চলে বিদ্যমান সর্বপ্রথম মস্জিদ স্থাপত্য (আটিয়া মস্জিদ) নিদর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে। শিলালিপি অনুযায়ী এটি এ অঞ্চলের বিখ্যাত পন্নী পরিবারের সাঈদ খান পন্নী নির্মাণ করেন।

সমসাময়িক ইতিহাসে সাঈদ খান পন্নীর সাথে মুসা খানের কোন সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায় না। যেহেতু ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মুসা খান অন্যান্য বার ভূঁইয়াদের শাসনাধীন অঞ্চলে মুগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে। তাই ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দের পরে টাঙ্গাইলের করটিয়া অঞ্চলের পন্নী পরিবারের সঙ্গে ইসলাম খানের কোনই সম্পর্ক ছিল না এ কথা নির্ভূল ভাবে বলা চলে। তাঁর সময় থেকে টাঙ্গাইল জেলা বাংলার সুবাদারের অধীনে থেকে ঢাকার নায়েব নাজিম কর্তৃত্ব শাসিত হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খান তাঁর নাত-জামাই মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন এবং তাঁর অনুমোদনক্রমে দিল্লীর তদানীন্তন বাদশাহ মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি তাঁর শশুর নবাব সুজাউদ্দিনের শাসনকালেও উক্ত পদে আসীন ছিলেন।

নবাব সুজাউদ্দিনের সময় বিহার এবং উড়িষ্যা প্রদেশ দু’টিকে বাংলার সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে এ বিরাট সুবা’র শাসনকার্যের সুবিধার জন্য একে চারটি ভাগে বিভক্ত করতে হয়।ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব মির্জা লুৎফুল্লাহ্র উপর ন্যস্ত হওয়ার ফলে টাঙ্গাইল জেলাসহ সমগ্র পূর্ববাংলা, দক্ষিণ বাংলা এবং উত্তর বাংলা কিয়দংশ ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীনে চলে আসে। মির্জা লুৎফুল্লাহ্ ওরফে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান তাঁর এলাকায় সামগ্রিক উন্নতিকল্পে বিশেষ যত্নবান হন। কবিতা রচনায় এবং হস্তলিপিতে তাঁর রূচিবোধের পরিচয় মিলে। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খানের পর ঢাকার নায়েব-নাজিম হিসাবে নিযুক্ত হন সরফরাজ খান। তাঁর অবর্তমানে তাঁর সহকারী সৈয়দ গালিব আলী খান শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। সরফরাজ খানের দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত হন যশোবন্ত রায়। যশোবন্ত রায় ছিলেন খুবই দক্ষ শাসক। ফলে ঢাকা বিভাগে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে নবাব শায়েস্তা খানের আমলের ন্যায়।জিনিসের দাম, বিশেষ করে খাদ্য দ্রব্যের দাম উল্লেখ করার মত।

এই শাসক সম্পর্কেও স্যার যদুনাথ সরকারের উক্তি প্রণিধান যোগ্য। এর ফলস্বরূপ, উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এত কমে যে শায়েস্তা খানের আমলের মত আট মন চালের বিনিময় মূল্য হয়েছিল এক টাকা। সরফরাজ খানের পর ঢাকার নাজিম হন মুরাদ আলী খান। তাঁর স্বপ্লকালীন শাসনকালে বাংলার আকাশ ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ।

এ অবস্থার সুযোগ নিলেন নবাব আলীবর্দী খান। তিনি মুগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের ফরমান বলে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে। নবাব আলীবর্দী খান মসনদে আসীন হয়ে তাঁর ভ্রাতৃস্পুত্র নাওয়াজিস মোহাম্মদকে ঢাকার নায়েব-নাজিম নিযুক্ত করেন। তাঁর সহকারী হিসাবে নিযুক্ত হন হুসেন কুলী খান। নবাব আলীবর্দী খানের পর বাংলার মসনদে খুব অল্প সময়ের জন্য আসীন ছিলেন তাঁর পৌত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিভূ বরার্ট ক্লাইভের হস্তে পরাজয় বরণ করলে বাংলার ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রথম যুগে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে নবাব শাহ্ সুজা প্রবর্তিত ‘সরকার বাজুহার’কে তিনটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করেন- ১) জমিদারি রাজশাহী, ২) আটিয়াদিগর, ৩) জামালপুর, ঢাকা। আটিয়া দিগরের অধীনে আটিয়া, বড়বাজু ও কাগমারী পরগণা অন্তর্ভূক্ত ছিল। ঈশা খাঁর আমলে আটিয়া পরগণার সবটাই মহৎ কাজের উদ্দেশ্যে বাবা আদম কাশ্মিরীকে দান করেন। বাবা আদম কাশ্মিমীরীর মৃত্যুর পূর্বে সাঈদ খাঁ এই পরগণার বন্দোবস্ত পান।

সাঈদ খাঁর পরবর্তী বংশধরগণই করটিয়ার পন্নী জমিদার এই টাঙ্গাইল অঞ্চলের সবচেয়ে প্রতাপশালী জমিদার। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পলাশী যুদ্ধের পরই বাংলায় ব্রিটিশ রাজত্ব পরোক্ষভাবে স্থাপিত হলেও ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে এ এলাকার উপর ব্রিটিশের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পলাশি যুদ্ধের পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ, দিল্লীর বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী প্রাপ্ত হ’লে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন বাংলার উপ সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে টাঙ্গাইল জেলা ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীন থেকে কোম্পানীর শাসনাধীনে চলে আসে।

তখন ঢাকার নায়েব-নাজিম পদের আসীন ছিলেন নবাব জাসারত খান (১৭৫৪-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ) নবাব কাজিম আলী খান তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন। এসময় তাঁকে কয়েক বৎসর পাটনা অবস্থান করতে হয়। ঢাকায় তাঁর অবর্তমানে কোম্পানীর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জনৈক স্কটল্যান্ডবাসী লেফ্টেনান্ট (পরে ক্যাপ্টেন) সুইন্টন। কোম্পানীর রাজত্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকার নায়েব-নাজিমগণের ক্ষমতা বিভাগীয় শাসকের পর্যায় থেকে আস্তে আস্তে স্থানীয় জমিদারদের ক্ষমতায় সংকুচিত হয়। ঢাকার নায়েব-নাজিমগণ ক্ষমতাশালী ছিলেন। তখন থেকে শুরু করে কোম্পানীর রাজত্বের শেষকাল পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে যেসব জমিদার এ জেলার উপর তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তাঁরা হলেন; করটিয়া পন্নীগণ, ও ধনবাড়ির জমিদারগণ এবং দেলদুয়ার, পাকুল্লা, নাটোরের মহারানী ভবানী ও তাঁর বংশধর, সন্তোষের মহারানী দিনমণি চৌধুরাণীর পূর্বপুরুষেরা বা এ বংশের জমিদারগণ নাগরপুর সহ স্থানীয় জমিদারগণ।কোম্পানীর শাসনকালে শুধু প্রজা নয় খাজনা আদায়ে ব্যর্থ হলে জমিদাররাও নিগৃহীত হয়েছে। কোম্পানীর শাসন আমলের প্রথম পর্যায়ে (১৯৬৯-৭০ ছিয়াত্তরের মন্নন্তর) সারা বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মত এ জেলার লোকদেরকে অবর্ণীয় দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় এবং বহু লোক খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করে। অনেকে উপায়ন্তর না দেখে দস্যূবৃত্তি অবলম্বন করে।

তাঁদের অনেককেই, পরবর্তী পর্যায়ে ফকির ও সন্ন্যাসীদের কোম্পানী শাসনের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী কার্যক্রম আমরা এ অঞ্চলে দেখতে পাই, সে কার্যক্রমে যোগদান করতে দেখা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক ও কারিগরদের বিদ্রোহ ঘটে। যার ব্যাপ্তি টাঙ্গাইল অঞ্চলে কার্যকর ছিলো সাম্প্রতিককালে ইতিহাসে এ বিদ্রোহ ‘ফকির-সন্ন্যাসী’বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কিন্তু এই বিদ্রোহকে তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের লিখিত পত্রাবলী ও রিপোর্টে সন্ন্যাসীদের আক্রমণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে প্রথম ‘কৃষক-বিদ্রোহ’নামে অভিহিত করেন। ফকির সন্ন্যাসীদের দমন ঢাকা কেন্দ্র থেকে পরিচালনের অসুবিধার জন্য ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ময়মনসিংহ কালেক্টরেট সৃষ্টি করা হয়।

মিঃ রটন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার প্রথম কালেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট। এ অবস্থায় আটিয়া পরগণা ব্যতীত টাঙ্গাইলের বেশী ভাগ অঞ্চল ময়মনসিংহ কালেক্টরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। আটিয়া ঢাকা কালেক্টরের অধীনে থাকে। এ সময় যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ময়মনসিংহ জেলার সীমানার পরিবর্তন হয়েছে। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে যখন ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়েছিল, তখন শ্রীহট্ট জেলার তরফ, ত্রিপুরা জেলার মেহের, সবাইল, বরদাখাত ইত্যাদি, নোয়াখালী জেলার ভেলুয়া, পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ, আসামের তুরা ইত্যাদি দূরবর্তী স্থান সমূহ ময়মনসিংহ কালেক্টরেট এর অধীনে ছিল।

কাগমারী ও আটিয়া পরগণা অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার শাসনাধীনের ছিল। জেলা স্থাপনের পর ময়মনসিংহ জেলায় ৮ টি তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমান টাঙ্গাইল জেলায় তখন কাগমারী ও পুখুরিয়া পরগণায় তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তহসিল কাচারী বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর কার্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর পদ বিলুপ্ত করা হয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিভাগীয় কমিশনারের পদ সৃস্টি করা হয়। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মহকুমা ব্যবস্থা চালু করা এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলাকে বিভক্ত করে জামালপুর, শেরপুর, হাজিপুর, পিংনা ও সিরাজগঞ্জ থানা সমন্বয়ে সদর মহকুমা স্থাপন করা।

এই ব্যবস্থায় বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া থানা ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমার এবং নাসিরাবাদ, গাবতলী, মধুপুর, নেত্রকোণা, ঘোষ গাঁও, ফতেপুর, গফরগাঁও, মাদারগঞ্জ, নিকলি ও বাজিতপুর থানা সমন্বয়ে সদর মহকুমা স্থাপন করা হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্রনদের গতিপথ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ থানার কিছু অংশ পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে এনে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া থানায় রূপান্তর করে ময়মনসিংহ কালেক্টরেটের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। টাঙ্গাইলের অধিকাংশ মৌজা তখন এই আটিয়ার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজার অন্তর্গত আটিয়া পরগণায় টানআইল থানা পত্তন করে। যা পরে টাঙ্গাইল নামে রূপান্তরিত হয়। এরপর বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া থানা ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমা এবং অন্যান্য অঞ্চল জামালপুর মহকুমা অন্তর্ভূক্ত হয়।

৩ মে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া, পিংনা ও মধুপুর থানা সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আটিয়া মহকুমা। ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে মহকুমা সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। জনাব ব্রহ্মনাথ সেন ছিলেন টাঙ্গাইল মহকুমার প্রথম মহকুমা প্রশাসক। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদীকে বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার সীমানা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ময়মনসিংহ জেলার ১৬৫টি গ্রামকে বগুড়া জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্রকে রংপুর ও ময়মনসিংহের এবং ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে যমুনাকে পাবনা ও ময়মনসিংহের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন পরগণার নিম্নে বর্ণিত অংশসমূহ তৎকালীন টাঙ্গাইল মহকুমা অন্তর্ভূক্ত ছিল। ক) পরগণা আটিয়া, এলাকা ৭৭৯.৬৯ বর্গমাইল, মহাল- ১৪৭টি। খ) পরগণা জাফরশাহি, এলাকা ২৩২.৬৩ বর্গমাইল, মহাল- ১০টি। গ) পরগণা কাগমারি, এলাকা ৩৪৪ বর্গমাইল, মহাল- ৪৫২টি। ঘ) পরগণা কাশীপুর, এলাকা ১.৬০ বর্গমাইল, মহাল- ৬৬টি। ঙ) পরগণা পুখুরিয়া, এলাকা ৫১৫.২৫ বর্গমাইল, মহাল- ৬০৪টি। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমার আয়তন ছিল ১০৪১ বর্গমাইল। তখন মহকুমায় টাঙ্গাইল, কালিহাতী ও গোপালপুর এই তিনটি থানা এবং নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ- এই চারটি ফাঁড়ি থানা ছিল। মধুপুর থানা তখন ময়মনসিংহ সদর মহকুমার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পাবনা এবং মধুপুর থানাকে টাঙ্গাইলের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলায় জেলাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলার কালেক্টর এই বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হতেন। সদস্যগণের মধ্য হতে ১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হতো।সহ-সভাপতি সহ মোট ২৫ জন এই বোর্ডের সভ্য ছিলেন। তন্মধ্যে ১২ জন লোকাল বোর্ডের সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত। বাকী ১২ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন।ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের আয়তন ছিল ৬২৭৮ বর্গকিলোমিটার। ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের অধীনে ৫ টি লোকাল বোর্ড স্থাপন করা হয়।

লোকাল বোর্ড গুলো হলো- ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইল। ১৬ জুন ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ই. ভি. লেবিঞ্জ (Levinge) এর সভাপতিত্বে গঠিত Administration Commnittee এর Reprot এ পুনরায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও গোপালপুর জেলা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। উল্লেখ্য ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী গর্ভণরের নির্বাহী পরিষদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ, জেলাকে বিভক্ত করাসহ ধনবাড়িতে একটা মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন।

তাঁর প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ধনবাড়িতে মহকুমা স্থাপনের জন্য ৫৫.৫ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হতে পারেনি।১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের নিকট ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে কায়েদাবাদ, নাসিরাবাদ, টাঙ্গাইল ও ইসলামাবাদ নামে ৪ টি জেলা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল।

প্রস্তাবটিতে টাঙ্গাইলে জেলা সদর স্থাপন করে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ মহকুমা সমন্বয়ে টাঙ্গাইল জেলার প্রতিষ্ঠাসহ গোপালপুরে পৃথক মহকুমা স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কর্তৃক টাঙ্গাইলে একটি পৃথক জেলা স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনা অনুসরণে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ৩৪১ একর জমি হুমুক দখল করে টাঙ্গাইল জেলা সদরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১ ডিসেম্বর তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানের গর্ভণর এডমিরাল এস. এম আহ্সান টাঙ্গাইল জেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জনাব এ. এন কলিমুল্লাহ ছিল টাঙ্গাইল জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক।